Skip to main content

হঠাৎ মৃত্যু: ভালো না কি খারাপ?

 হঠাৎ মৃত্যু: ভালো না কি খারাপ?

▬▬▬◄◉►▬▬▬



প্রশ্ন: একজন মুসলিমের জন্য হঠাৎ মৃত্যু ভালো না কি খারাপ?

উত্তর:

হঠাৎ মৃত্যু ভালো ও মন্দ উভয়টাই হতে পারে। তা নির্ভর করছে ব্যক্তির অবস্থার উপরে। 

➤ সে যদি দ্বীনদার, সৎকর্মশীল ও তাকওয়াবান হয় তাহলে যে অবস্থায়ই মৃত্যু হোক না এটি তার জন্য কল্যাণকর। বরং হঠাৎ মৃত্যু (যেমন: দুর্ঘটনা বশত: মৃত্যু) তার জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত। কারণ এতে তাকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট পোহাতে হল না, রোগ-ব্যাধিতে পড়ে বিছানায় কাতরাতে হল না, অবস্থা নাজেহাল হল না, কারো প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন হল না। এতে আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, গুনাহ মোচন হয় এবং দুনিয়ার সকল কষ্ট-ক্লেশকে বিদায় জানিয়ে সে রবের সন্তুষ্টি ও জান্নাতের দিকে এগিয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا،

“মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে এখন সে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পায়।” (সুনানে নাসাঈ, অধ্যায়: জানাযা, অনুচ্ছেদ: মৃত্যুতে মুমিনের নিষ্কৃতি প্রাপ্তি. হা/১৯৩০-সহিহ)

➤ পক্ষান্তরে সে যদি আল্লাহর নাফরমান ও পাপিষ্ঠ হয় তাহলে যে অবস্থায় মৃত্যু হোক কেন তা তার জন্য মহা বিপদের কারণ। বিশেষ করে হঠাৎ মৃত্যুর কারণে সে পাপাচার থেকে তওবা করার সুযোগ পেলো না, নিজের অবস্থা সংশোধন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল, মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে পারলো না এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবের দিকে ধাবিত হল।

আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত আছে তারা বলেন: 

أسف على الفاجر وراحة للمؤمن

“(হঠাৎ মৃত্যু) পাপীর জন্য আফসোস আর মুমিনের জন্য নিষ্কৃতির কারণ।” (মুসাননাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৩৭০ ও বায়হাকী ৩/৩৭৯)

উল্লেখ্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ মৃত্যু থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন মর্মে বর্ণিত হাদিসের সনদ সহিহ নয়।

ফিরোযাবাদি রহ. বলেন: “এ বিষয়ে কোন সহিহ হাদিস নেই।” (সাফারুস সাআদাহ, পৃষ্ঠা নং ৩৫৩)

উল্লেখ্য যে, হঠাৎ মৃত্যু কিয়ামতের একটি আলামত। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

حديث أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال : (إن من أمارات الساعة أن يظهر موت الفجأة)، رواه الطبراني وحسّنه الألباني.

আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“কিয়ামতের একটি আলামত হল, ‘হঠাৎ মৃত্যু’ প্রকাশ পাওয়া।” (ত্বাবারানী, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন) আ্ল্লাহু আলাম।

পরিশেষে আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন, আমাদেরকে এমন ঈমান ও আমলের উপর মৃত্যু দান করেন যা দ্বারা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা অর্জন করতে পারি। নিশ্চয় তিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় ক্ষমাশীল।

▬▬▬◄◉►▬▬▬

উত্তর প্রদানে:

আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

জুবাইল, সৌদি আরব

Comments

Popular posts from this blog

আস্তাগফিরুল্লাহ বা এসতেগফারের ফযিলতসমূহ।

  আস্তাগফিরুল্লাহ বা এসতেগফারের ফযিলতসমূহ: আজ ইনশা আল্লাহ পবিত্র কোরান ও হাদীসের আলোকে এসতেগফারের অসংখ্যা উপকারিতা থেকে ২৫টি উপকারিতা ও ফযিলত আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব যে সব সমস্যায় আমরা প্রতিদিন সম্মুখিন হই দেখুন এ একটি শব্দে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে সব সমস্যার সমাধান রেখে দিয়েছে আসুন দেখি আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এসতেগফারের মধ্যে কি কি কারিশমা রেখে দিয়েছেন যা আমাদের জানা নাই। তওবা এবং এস্তেগফার প্রায় একই, তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এস্তেগফার হলো জবান বা মুখ দ্বারা ক্ষমা চাওয়া আর তওবা হলো অন্তর দিয়ে ক্ষমা চাওয়া। এস্তেগফারের জন্য গোনাহ হওয়া বা গোনাহ থাকা জরুরি নয়। নবী-রাসুলরা প্রত্যহ অসংখ্যবার আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করতেন, অথচ তাদের কোনো গোনাহ ছিল না। তারা নিষ্পাপ তথা মাসুম ছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) দোয়ায় বলতেন, ‘হে আল্লাহ আমার ছোট-বড়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, গোপনে-প্রকাশ্যে, শুরুতে ও শেষে কৃত সব গোনাহ ক্ষমা করে দাও।’ (মুসলিম)। বান্দা তওবা ও এস্তেগফারের সমন্বয় করে দোয়া করবে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের রবের কাছে তওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা...

যে-সব ছোটো আমল পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়

 ▌যে-সব ছোটো আমল পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়💕 _______________________________________________ . ০১. পরিপূর্ণভাবে ওযু করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে-ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে ওযু করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ফলে তার সালাত এবং মাসজিদে গমন, নফল হিসেবে বিবেচিত হয়।" . (সহীহ মুসলিম, হা. ২২৯) . . ০২. ওযু-পরবর্তী দুই রাকা‘আত সালাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে-ব্যক্তি অতি উত্তমভাবে ওযু করে এমনভাবে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে, যাতে দুনিয়াবি কোনো চিন্তা আসে না, তাহলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" . ( সহীহুল বুখারী, হা.৬৪৩৩ ; সহীহ মুসলিম, হা.২২৬ ) . . ০৩. রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দু‘আ পাঠ। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "ইমাম যখন ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদা’ বলে, তখন তোমরা ‘আল্লাহম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’ বলো। কেননা যার বলা ফেরেশতাদের বলার সাথে মিলে যায়, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" . (তিরমিযি, হা. ২৬৭; সহীহ) . . ০৪. সূরা ফাতিহা শেষে 'আমীন' বলা। রাসূল সাল্লাল্লা...

আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে।

 কথিত শবে বরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ঘোষণা এবং একটি ভুল বিশ্বাসের অপনোদন: (আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে) ◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সুপ্রিয় দীনী ভাই ও বোনেরা, প্রথমেই মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর অবারিত নেয়ামত, মাগফিরাত ও রহমতের বারিধারায় সিক্ত করে জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করে নেন। আমীন। প্রিয় বন্ধুগণ, অর্ধ শাবান বা কথিত শবে বরাত সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানামুখী কথাবার্তায় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ আজ মহাবিপাকে আছে। চলছে পক্ষে ও বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক। এ প্রেক্ষাপটে আমি আপনাদের সামনে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হব আর অপনোদন হবে কিছু ভুল বিশ্বাসের ইনশাআল্লাহ। ❑ আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার ঘোষণা কেবল অর্ধ শাবানের রাতে নির্দিষ্ট নয় বরং এ ঘোষণা আসে প্রতি সপ্তাহে দুবার করে: ▬▬▬▬▬▬▬▬▬ হে সত্যান্বেষী মুক্তিকামী ভাই, আপনি শবে বরাতের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কারণ আপনি আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করতে চান এবং চান আল্লাহ যেন আপনার দুআ কবুল করেন। মূলত:...