Skip to main content

প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলারা কি খেলাধুলা করতে পারবে? খেলাধুলার ক্ষেত্রে ইসলামি মূলনীতি কী?



প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে মহিলারা কি খেলাধুলা করতে পারবে? খেলাধুলার ক্ষেত্রে ইসলামি মূলনীতি কী?

উত্তর:

শারীরিক সুস্থতা, মানসিক বিকাশ, হালাল বিনোদন ইত্যাদি উদ্দেশ্যে শরীরচর্চা এবং কিছু খেলাধুলা করা উপকারী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, খেলাধুলার ফলে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সচল থাকে এবং শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে আল্লাহর রহমতে সবল দেহ, সচল মন এবং বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হয়। এটি চিত্তবিনোদনের ও একটি মাধ্যম।

বিশেষ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে শহুরে জীবনে নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীরা অধিকাংশই খেলাধুলা বলতে বোঝে অনলাইন ভিডিও গেম বা মোবাইল গেইম অথচ এগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন ক্ষতিকর তেমনই মানসিক বিকাশের পথেও বড় বাধা। 

সুতরাং শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষ সকলের জন্য কিছু শরীর চর্চা করা ও হালাল খেলাধুলা করা নাজায়েজ নয়। 

তবে এ ক্ষেত্রে কতিপয় ইসলামি মূলনীতি মেনে চলা আবশ্যক। যেমন:

১. কাজটি অবশ্যই হালাল হতে হবে। যেমন: হাঁটা বা দৌড়, সাঁতার কাটা, ঘোড় দৌড়, বিভিন্ন ধরণের শারীরিক কসরত ইত্যাদি।

২. খেলাধুলার পিছনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় না করা। কারণ একজন ইমানদার ব্যক্তির জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আখিরাতে আল্লাহ তাআলা তার জীবন ও যৌবনের হিসাব নিবেন।

৩. খেলাধুলার কারণে নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, জ্ঞানচর্চা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শন না করা।

৪. খেলাধুলায় সীমাতিরিক্ত মত্ত না থাকা-যার কারণে স্বামী-সন্তান, পরিবার ও পেশাগত দায়-দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অবহেলা পরিলক্ষিত হয়।

৫. খেলাধুলায় এত সময় ব্যয় না করা যার ফলে চাকুরি, ব্যবসা, কর্মক্ষেত্র বা জীবিকা অর্জনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

৬. এমন পোশাক পরিধান করা জায়েজ নাই যার কারণে পর্দা লঙ্ঘিত হয় বা শরীরের গোপন অঙ্গ ও লজ্জা স্থানগুলো অন্যের সামনে দৃশ্যমান হয়।

৭. শরীর চর্চা বা খেলাধুলার ক্ষেত্রে মিউজিক ব্যবহার করা জায়েজ নাই।

৮. খেলাধুলায় বাজি বা জুয়া না থাকা।

৯. খেলাধুলাকে অর্থ উপার্জন এবং জীবিকার পেশা হিসেবে গ্রহণ না করা।

১০. মার্শাল আর্ট তথা জুডো, কারাতে, কুংফু ইত্যাদিতে প্রশিক্ষককে সম্মান প্রদর্শনার্থে মাথা বা শরীর ঝুঁকিয়ে বাউ (Bow) না করা।

উপরোক্ত শর্তাবলীর পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শর্ত হল, 

১১. অবশ্যই তা সম্পূর্ণ ফিতনা-ফ্যাসাদ মুক্ত নিরাপদ পরিবেশে হতে হবে।

১২. পরপুরুষের সহবস্থান মুক্ত পর্দাবৃত স্থানে হতে হবে।

১৩. নির্জনে নন মাহরাম ব্যক্তির নিকটে অবস্থান করা যাবে না ইত্যাদি।

❂ মহিলাদের খেলাধুলার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বনন্দিত ফকিহ, দাঈ ও আলেম শাইখ বিন বায রাহ. বলেন,

“পবিত্র শরীয়ত লঙ্ঘন করে না এমন ক্ষেত্রে মহিলাদের খেলাধুলায় কোনও ক্ষতি নেই। যেমন: তারা এমন সংরক্ষিত স্থানে অধিক পরিমাণে হাঁটবে যেখানে পরপুরুষরা মহিলাদের সাথে মেশে না এবং পরপুরুষরা তা দেখতে পায় না। অথবা বাড়িতে মহিলাদের মাঝে বা মহিলাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে সাঁতার কাটবে-যেখানে তাদেরকে পরপুরুষরা দেখে না এবং সেখানে পরপুরুষদের কোনও সংযোগ নাই।

তিনি আরও বলেন, যে সব খেলাধুলা নারীদের জন্য নির্ধারিত এবং যাতে ইসলাম নিষিদ্ধ কোনও কিছু নেই, নারী-পুরুষ সহবস্থান নেই বরং নারী-পুরুষ সংশ্রব মুক্ত ও পর্দাবৃত স্থানে খেলাধুলায় কোন দোষ নেই- চাই তা হাঁটা, সাঁতার কাটা বা এ জাতীয় খেলাধুলা যাই হোক না কেন। অনুরূপভাবে (এ সকল শর্ত সাপেক্ষে) তাদের মধ্যে খেলাধুলার প্রতিযোগিতা করাও দূষণীয় নয়।” [শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট]

আল্লাহু আলাম।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

আস্তাগফিরুল্লাহ বা এসতেগফারের ফযিলতসমূহ।

  আস্তাগফিরুল্লাহ বা এসতেগফারের ফযিলতসমূহ: আজ ইনশা আল্লাহ পবিত্র কোরান ও হাদীসের আলোকে এসতেগফারের অসংখ্যা উপকারিতা থেকে ২৫টি উপকারিতা ও ফযিলত আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব যে সব সমস্যায় আমরা প্রতিদিন সম্মুখিন হই দেখুন এ একটি শব্দে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে সব সমস্যার সমাধান রেখে দিয়েছে আসুন দেখি আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এসতেগফারের মধ্যে কি কি কারিশমা রেখে দিয়েছেন যা আমাদের জানা নাই। তওবা এবং এস্তেগফার প্রায় একই, তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এস্তেগফার হলো জবান বা মুখ দ্বারা ক্ষমা চাওয়া আর তওবা হলো অন্তর দিয়ে ক্ষমা চাওয়া। এস্তেগফারের জন্য গোনাহ হওয়া বা গোনাহ থাকা জরুরি নয়। নবী-রাসুলরা প্রত্যহ অসংখ্যবার আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করতেন, অথচ তাদের কোনো গোনাহ ছিল না। তারা নিষ্পাপ তথা মাসুম ছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) দোয়ায় বলতেন, ‘হে আল্লাহ আমার ছোট-বড়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, গোপনে-প্রকাশ্যে, শুরুতে ও শেষে কৃত সব গোনাহ ক্ষমা করে দাও।’ (মুসলিম)। বান্দা তওবা ও এস্তেগফারের সমন্বয় করে দোয়া করবে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের রবের কাছে তওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা...

যে-সব ছোটো আমল পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়

 ▌যে-সব ছোটো আমল পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়💕 _______________________________________________ . ০১. পরিপূর্ণভাবে ওযু করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে-ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে ওযু করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ফলে তার সালাত এবং মাসজিদে গমন, নফল হিসেবে বিবেচিত হয়।" . (সহীহ মুসলিম, হা. ২২৯) . . ০২. ওযু-পরবর্তী দুই রাকা‘আত সালাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে-ব্যক্তি অতি উত্তমভাবে ওযু করে এমনভাবে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে, যাতে দুনিয়াবি কোনো চিন্তা আসে না, তাহলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" . ( সহীহুল বুখারী, হা.৬৪৩৩ ; সহীহ মুসলিম, হা.২২৬ ) . . ০৩. রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দু‘আ পাঠ। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "ইমাম যখন ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদা’ বলে, তখন তোমরা ‘আল্লাহম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’ বলো। কেননা যার বলা ফেরেশতাদের বলার সাথে মিলে যায়, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" . (তিরমিযি, হা. ২৬৭; সহীহ) . . ০৪. সূরা ফাতিহা শেষে 'আমীন' বলা। রাসূল সাল্লাল্লা...

আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে।

 কথিত শবে বরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ঘোষণা এবং একটি ভুল বিশ্বাসের অপনোদন: (আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে) ◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সুপ্রিয় দীনী ভাই ও বোনেরা, প্রথমেই মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর অবারিত নেয়ামত, মাগফিরাত ও রহমতের বারিধারায় সিক্ত করে জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করে নেন। আমীন। প্রিয় বন্ধুগণ, অর্ধ শাবান বা কথিত শবে বরাত সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানামুখী কথাবার্তায় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ আজ মহাবিপাকে আছে। চলছে পক্ষে ও বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক। এ প্রেক্ষাপটে আমি আপনাদের সামনে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হব আর অপনোদন হবে কিছু ভুল বিশ্বাসের ইনশাআল্লাহ। ❑ আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার ঘোষণা কেবল অর্ধ শাবানের রাতে নির্দিষ্ট নয় বরং এ ঘোষণা আসে প্রতি সপ্তাহে দুবার করে: ▬▬▬▬▬▬▬▬▬ হে সত্যান্বেষী মুক্তিকামী ভাই, আপনি শবে বরাতের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কারণ আপনি আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করতে চান এবং চান আল্লাহ যেন আপনার দুআ কবুল করেন। মূলত:...