Skip to main content

▌প্রশ্ন: রিযিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কোন আমল আছে কি?

▌প্রশ্ন: রিযিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ কোন আমল আছে কি?



উত্তর:

রিযিক বৃদ্ধির জন্য সব চেয়ে বড় আমল হচ্ছে:

প্রথমত: আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া। যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে তথা সকল ফরয-ওয়াজিব সম্পাদন করবে এবং সকল হারাম থেকে বেঁচে থাকবে, তাকে আল্লাহ্ রিযিক দান করবেন।

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,

وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ

"যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলবে আল্লাহ তার জন্য উপায় বের করে দিবেন এবং তাকে কল্পনাতীত উপায় থেকে রিযিক দান করবেন”। (সূরা ত্বালাক: ২-৩)

.

সুতরাং আল্লাহর ভয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে যদি আপনি অবলম্বন করেন তাহলে আল্লাহ্ আপনাকে রিযিক দান করবেন ।

.

দ্বিতীয়ত: তাওবা করা ও ইস্তেগফার পাঠ করা। খুব বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পড়লে এর মাধ্যমে আল্লাহ রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন।

.

আল্লাহ্ তা'আলা বলেন,

اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا

.

"তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে মুষলধারে উপকারী বৃষ্টি দান করবেন, তোমাদেরকে প্রচুর ধন-সম্পদ ও সন্তান দান করবেন, আর তোমাদের যে ফসলের বাগিচা রয়েছে সেটাকে তিনি সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের নদী গুলোকে প্রবাহিত রাখবেন"। (সূরা নূহ: ১০-১২)

অতএব বুঝা গেলো বেশি বেশি ইস্তেগফার করলে রিযিক বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করবে আল্লাহ্ তার সকল দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন। তার সংকীর্ণ অবস্থাকে প্রশস্ততা দিয়ে পরিবর্তন করে দিবেন। এবং তাকে কল্পনাতীত উপায়ে রিযিক দান করবেন। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ, সনদ যঈফ)

তৃতীয়ত: দান করলে রিযিক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

ماَ نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ

সাদাকা করলে বান্দার সম্পদ কমে না। (মুসলিম)

অন্য এক হাদিসে আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যারা দান করে তাদের জন্য ফেরেশতা দোয়া করে এবং বলে,

اللَّهُمَّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا

“হে আল্লাহ্ তুমি তার এই দানের বিনিময়ে তার সম্পদ বৃদ্ধি করে দাও”। (বুখারী ও মুসলিম)

চতুর্থত: আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখলেও রিযিক বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ رِزْقُهُ ، أَوْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ

যে ব্যক্তি কামনা করে যে তার হায়াত বাড়িয়ে দেয়া হোক এবং রিযিক বৃদ্ধি করা হোক, তাহলে সে যেনো আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রেখে চলে। (সহীহ বুখারী)

.

পঞ্চমত: দুয়া: সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন, হে আল্লাহ্ আমার রিযিক বাড়িয়ে দিন।

.

আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন,

رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ: হে আমার রব, আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, এবং পরকালেও কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন ।

রিযিক সংখ্যায় বৃদ্ধি পাওয়াটা জরুরী নয়; বরং আল্লাহ্ যে রিযিক দিবেন তাতে বরকত হওয়াটা জরুরী। এই জন্য আল্লাহর কাছে সর্বদা বরকত কামনা করতে হবে।

আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দুয়াটি পড়তেন,

اللَّهُمَّ إنِّيْ أسْألُكَ عِلْماً ناَفِعاً وَرِزْقاً طَيِّباً وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

"হে আল্লাহ্ আমি প্রার্থনা করছি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান, আরো প্রার্থনা করছি পবিত্র রিযিক এবং এমন আমল যা তুমি কবুল করবে”।

.

অতএব রিযিক হলেই হবে না সেটা যেনো পবিত্র হয় তা আল্লাহর কাছে চাইতে হবে।

.

সর্বোপরি যেটুকু রিযিক আল্লাহ্ দিবেন তাতে যদি বান্দা সন্তুষ্ট হয়, তাহলে সেটা তার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। কেননা অনেক ধনী মানুষ আছে, যাদের অনেক সম্পদ রয়েছে কিন্তু তারা সন্তুষ্ট না তৃপ্ত না। তাদের লোভ লালসা এতো বেশি যে যতই পায় ততই চায়। ফলে ঐ রিযিক তাদের কোন উপকারে আসে না।

.

হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে কল্যাণময় পবিত্র ও উপকারী রিযিক দান করুন এবং তাতে বরকত দিন। আমীন

============

উত্তর প্রদানে;
আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল.. দাঈ, দক্ষিণ জেদ্দা ইসলামী দাওয়া সেন্টার।
*Group Link: https://rb.gy/ydoexz
*Page Link: https://rb.gy/ler4ig

Comments

Popular posts from this blog

আস্তাগফিরুল্লাহ বা এসতেগফারের ফযিলতসমূহ।

  আস্তাগফিরুল্লাহ বা এসতেগফারের ফযিলতসমূহ: আজ ইনশা আল্লাহ পবিত্র কোরান ও হাদীসের আলোকে এসতেগফারের অসংখ্যা উপকারিতা থেকে ২৫টি উপকারিতা ও ফযিলত আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব যে সব সমস্যায় আমরা প্রতিদিন সম্মুখিন হই দেখুন এ একটি শব্দে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে সব সমস্যার সমাধান রেখে দিয়েছে আসুন দেখি আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এসতেগফারের মধ্যে কি কি কারিশমা রেখে দিয়েছেন যা আমাদের জানা নাই। তওবা এবং এস্তেগফার প্রায় একই, তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, এস্তেগফার হলো জবান বা মুখ দ্বারা ক্ষমা চাওয়া আর তওবা হলো অন্তর দিয়ে ক্ষমা চাওয়া। এস্তেগফারের জন্য গোনাহ হওয়া বা গোনাহ থাকা জরুরি নয়। নবী-রাসুলরা প্রত্যহ অসংখ্যবার আল্লাহর কাছে এস্তেগফার করতেন, অথচ তাদের কোনো গোনাহ ছিল না। তারা নিষ্পাপ তথা মাসুম ছিলেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) দোয়ায় বলতেন, ‘হে আল্লাহ আমার ছোট-বড়, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, গোপনে-প্রকাশ্যে, শুরুতে ও শেষে কৃত সব গোনাহ ক্ষমা করে দাও।’ (মুসলিম)। বান্দা তওবা ও এস্তেগফারের সমন্বয় করে দোয়া করবে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে লোকেরা, তোমরা তোমাদের রবের কাছে তওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা...

যে-সব ছোটো আমল পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়

 ▌যে-সব ছোটো আমল পূর্বের সমস্ত গুনাহ মিটিয়ে দেয়💕 _______________________________________________ . ০১. পরিপূর্ণভাবে ওযু করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে-ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে ওযু করে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ফলে তার সালাত এবং মাসজিদে গমন, নফল হিসেবে বিবেচিত হয়।" . (সহীহ মুসলিম, হা. ২২৯) . . ০২. ওযু-পরবর্তী দুই রাকা‘আত সালাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে-ব্যক্তি অতি উত্তমভাবে ওযু করে এমনভাবে দুই রাকা‘আত সালাত আদায় করে, যাতে দুনিয়াবি কোনো চিন্তা আসে না, তাহলে তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" . ( সহীহুল বুখারী, হা.৬৪৩৩ ; সহীহ মুসলিম, হা.২২৬ ) . . ০৩. রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দু‘আ পাঠ। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "ইমাম যখন ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদা’ বলে, তখন তোমরা ‘আল্লাহম্মা রব্বানা- লাকাল হামদ’ বলো। কেননা যার বলা ফেরেশতাদের বলার সাথে মিলে যায়, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" . (তিরমিযি, হা. ২৬৭; সহীহ) . . ০৪. সূরা ফাতিহা শেষে 'আমীন' বলা। রাসূল সাল্লাল্লা...

আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে।

 কথিত শবে বরাতে মহান আল্লাহর ক্ষমা ঘোষণা এবং একটি ভুল বিশ্বাসের অপনোদন: (আশা করি, এ লেখাটি শবে বরাত সম্পর্কে আপনার ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিবে) ◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। সুপ্রিয় দীনী ভাই ও বোনেরা, প্রথমেই মহান আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদের সকলকে তাঁর অবারিত নেয়ামত, মাগফিরাত ও রহমতের বারিধারায় সিক্ত করে জান্নাতের অধিবাসী হিসেবে কবুল করে নেন। আমীন। প্রিয় বন্ধুগণ, অর্ধ শাবান বা কথিত শবে বরাত সম্পর্কে আমাদের সমাজে নানামুখী কথাবার্তায় সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমগণ আজ মহাবিপাকে আছে। চলছে পক্ষে ও বিপক্ষে তর্ক-বিতর্ক। এ প্রেক্ষাপটে আমি আপনাদের সামনে কয়েকটি বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করব। আশা করি, এর মাধ্যমে আমরা কিছু বিষয়ে সচেতন হব আর অপনোদন হবে কিছু ভুল বিশ্বাসের ইনশাআল্লাহ। ❑ আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমার ঘোষণা কেবল অর্ধ শাবানের রাতে নির্দিষ্ট নয় বরং এ ঘোষণা আসে প্রতি সপ্তাহে দুবার করে: ▬▬▬▬▬▬▬▬▬ হে সত্যান্বেষী মুক্তিকামী ভাই, আপনি শবে বরাতের রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কারণ আপনি আল্লাহর ক্ষমা অর্জন করতে চান এবং চান আল্লাহ যেন আপনার দুআ কবুল করেন। মূলত:...